হাওর বার্তা ডেস্কঃ অজুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে। এ সুন্নতগুলো আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অজু আদায় হয়। অজুর নিয়ত করা। এমন নিয়ত করা যে, যাতে আমি নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজু করছি
অজুর ফরজ
অজুর মধ্যে চারটি বিষয় ফরজ। এ ফরজগুলো সরাসরি কোরআন দ্বারা নির্ধারিত ও নির্দেশিত। যদি সেগুলোর একটাও বাদ পড়ে যায় বা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তখন অজু হবে না। অজুর চারটি ফরজ নিম্নরূপ।
পুরো মুখম-ল একবার ধোয়া।
উভয় হাত কনুইসহ একবার ধোয়া।
মাথার এক-চতুর্থাংশ একবার মাসেহ করা।
টাখনোসহ উভয় পা একবার করে ধোয়া।
এতটুকু করলে অজু হয়ে যাবে। কিন্তু সুন্নত অনুযায়ী অজু করলে তা উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে আদায় হয়। তাছাড়া এতে সওয়াবও বেশি পাওয়া যায়। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/৯৫ ও ফতওয়ায়ে শামী, ১/২১১২১২)।
অজুর সুন্নত
অজুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে। এ সুন্নতগুলো আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অজু আদায় হয়।
অজুর নিয়ত করা। যথা এমন নিয়ত করা যে, যাতে আমি নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজু করছি। (সুনানুন নাসায়ী : ১/২৪)।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়া। কোনো কোনো রেওয়াতে নিচের দোয়াটি পড়ার কথা আছে বিসমিল্লাহিল আযিম ওয়ালহামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম।
অন্য রেওয়াতে বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহ পড়ার কথা বলা হয়েছে।
অজু করার সময় নিচের দোয়াটি পড়া সুন্নত : আল্লা-হুম্মাগফির লি যাম্বি, ওয়াওয়াচ্ছি লি ফি দা-রি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১০৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ : ১/৫১৩)।
উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৫)।
মেসওয়াক করা। মেসওয়াক না থাকলে আঙুলের সাহায্যে দাঁত পরিষ্কার করা। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১০৫-১০৬)।
তিনবার কুলি করা। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৪)।
তিনবার নাকে পানি দেওয়া এবং ভালোভাবে ঝেড়ে পরিষ্কার করা। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৫)।
রোজাদার না হলে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু অতিরঞ্জন করা অর্থাৎ খুব ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৯)।
প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া। (বোখারি : ১/২৭-২৮)।
মুখম-ল ধোয়ার সময় দাড়ি খিলাল করা। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৯)।
হাত এবং পা ধোয়ার সময় আঙুলগুলো খিলাল করা। (সুনানে আবু দাউদ : ১/১৯)।
একবার সব মাথা মাসেহ করা। (ফতওয়ায়ে শামী : ১/২৪৩)।
কান মাসেহ করা। (সুনানুন নাসায়ী : ১/২৯)।
অজু করার সময় অঙ্গগুলো একটু ঘর্ষণ করে ধোয়া। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১১২)।
এক অঙ্গ শুকাবার আগে অন্য অঙ্গ ধোয়া। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১১৩)।
ধারাবাহিকভাবে অজু করা। অর্থাৎ যেটার পর যে অঙ্গ ধুতে হবে সেটাই ধোয়া। আগে পরে না করা। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১১২)।
ডান দিক থেকে প্রথমে ধোয়া। ডান পাশের অঙ্গ আগে ধোয়া। (বোখারি : ১/২৯)।
মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসেহ শুরু করা। (বোখারি : ১/৩১)।
ঘাড় মাসেহ করা। গলা মসেহ করবেন না, এটা বেদাত। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/১১৫)।
অজু শেষ হওয়ার পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
তারপর এ দোয়াটি পড়বেন, আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাত তাওওয়া-বিনা, ওয়াজ আলনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। (তিরমিজি : ১/১৮)।
গোসলের ফরজ
গোসলের মধ্যে কিছু বিষয় ফরজ আছে, যেগুলো ছাড়া গোসল সঠিক হয় না। এজন্য এগুলো জেনে রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। গোসলের ফরজ তিনটি
এমনভাবে কুলি করা, যাতে পুরো মুখগহ্বরে পানি পৌঁছে যায়। (বেহেশতি জেওর : ১/৫৯ ও ফতওয়ায়ে শামী : ১/২৯২)।
নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। (সুনানুন নাসায়ী : ১/৫)।
পুরো শরীরে পানি ঢালা। (হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ : ১/৮৬)।
সুন্নত অনুযায়ী গোসল
ওপরে শুধু গোসলের ফরজগুলো আলোচনা করা হয়েছে। আর সুন্নত সহকারে গোসল হলো এভাবে প্রথমে উভয় হাতকে কবজি পর্যন্ত ধোয়ে নেবেন। তারপর লজ্জাস্থান ধোয়ে নেবেন। হাত ও লজ্জাস্থানে নাপাকি থাক বা না থাক, সর্বাবস্থায় এ দুই অঙ্গকে সর্বপ্রথম ধোয়ে নিতে হবে। (এখানে লজ্জাস্থান বলতে সামনের এবং পেছনের উভয়টিকে বোঝানো হয়েছে)। তারপর শরীরের কোনো স্থানে বীর্য বা অন্য কোনো নাপাকি থাকলে সেটা ধোয়ে নিতে হবে। তারপর সুন্নত অনুযায়ী অজু করবেন। যেখানে গোসল করছেন, সেখানে যদি পানি জমে থাকে, তাহলে পা ধুবেন না। গোসলের পর ধোয়ে নেবেন। অজু করার পর মাথার ওপর দিয়ে এমনভাবে তিনবার পানে ঢালবেন, যাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে পানি পৌঁছে যায়। শরীর হাত দিয়ে মালিশ করবেন, যাতে কোথাও শুকনা থেকে না যায়। কেননা চুল পরিমাণও যদি শুকনো থেকে যায়, গোসল হবে না। তারপর সেখান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়ে নিতে হবে। কিন্তু অজু করার সময় পা ধুয়ে থাকলে এখন আর ধোয়ার প্রয়োজন নেই। (বেহেশতি জেওর, ফতওয়ায়ে শামী : ১/১৫৭১৫৯)।
ফায়দা : গোসল করার পর কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলার কথাও আছে, আবার না মোছার কথাও আছে। এজন্য আপনি যেটাই করবেন, সুন্নতের নিয়ত করে করবেন। (নাসায়ী : ১/৩১; তিরমিজি : ১/১৮; ফতওয়ায়ে শামী : ১/৯৭)।